Wednesday, 14 August 2013

ভেবে দেখেছেন কি? দান কি প্রয়োজন? দানে কী প্রয়োজন?

আমরা সবাই প্রতিনিয়তই বিক্ষিপ্ত ভাবে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে ক্ষুদ্র হোক অথবা বৃহৎ হোক দান করে যাচ্ছি। কিন্তু এক বারও কি ভেবে দেখেছি যে আমাদের এই দান সামাজিক/ পার্থিব কোন উপকারে আসছে কিনা?


অনেকেই দান করার সময় বলেন যে,আমার দান করার দরকার,তাই দান করছি। গ্রহীতা কোথায় এই দান খরচ করে তা জানার প্রয়োজন কি অথবা জানবোই বা কিভাবে? অথচ ইসলাম ও যুক্তি বলে ভিন্ন কথা। আপনি যাকে দান করছেন তার ব্যাপারে সম্পূর্ণ জেনে দান করতে বলা হয়েছে। গ্রহীতা যদি এই টাকা নিয়ে অসৎ কোন কাজে খরচ করে তবে আল্লাহ তাআলা সর্ব প্রথম আপনাকেই দায়ী করবেন। সূরা মায়েদার ২ নং আয়াতে আছে-তোমরা অসৎ ও সীমালংঘনের কাজে একে অপরকে সহযোগীতা করো না।


আপনি যখন দান করবেন তখন তা যেন সমাজের উপকারে আসে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আপনার দান যদি সমাজের কোন উপকারেই না আসে তবে কেন শুধু শুধু এই টাকা খরচ করবেন? নিজের সামাজিক 
মর্যাদা বাড়ানোর জন্য? তা সম্পূর্ণ হারাম। অনেকে আবার মনে করেন দানের ফলটা আখিরাতে পাবেন। তাদেরকে জানাচ্ছি - যে কাজের সামান্য ফলাফল পৃথিবীতে নেই তার ফল আপনি আখিরাতে আশা করেন কিভাবে? হাদীস শরীফে বলা হয়েছে-পৃথিবী আখিরাতের শস্যক্ষেত্র। কুরআনের আয়াতে (সূরা বাক্বারা- ২০১) আছে - হে আমাদের প্রভু আমাদেরকে পৃথিবীতে এবং আখিরাতে কল্যাণ দাও। একটু খেয়াল করুন এই জায়গায় পৃথিবীর কথাই আগে বলা হয়েছে। তাই আপনার দানের যদি পার্থিব কোন গুনফল না থাকে তবে তার প্রয়োজনই বা কি?

অনেকেই মনে করেন- আগে ধনী হয়ে নেই তারপর দান করব। অথচ আমরা সবাই জানি যে,কোন স্থানে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে হলে তার সব বায়ু শূণ্য হয়ে যায়। সুতরাং আপনার অনেক অর্থ সম্পদ হওয়ার সাধারণ উপায় হচ্ছে খরচ করা বা দান করা।

আবার অনেকে মনে করেন-আমার সম্পদ, আমার উপার্জনের আমিই মালিক। জমিয়ে রাখা বা খরচ করা আমার ইচ্ছাধীন। অথচ কুরআন শরীফের সূরা আদ্দাহরিয়াত এর ১৯ নং আয়াতে আছে- তাদের (ধনী ব্যক্তিদের) সম্পদে অস্বচ্ছল ও অসহায়দের অধিকার রয়েছে। এছাড়াও কুরআনের বিভিন্ন স্থানে দান করার কথা বলা হয়েছে (সূরা বাকারা আয়াত নং ০৪ এ মুত্তাকী হওয়ার শর্তাবলী হিসেবে দানের কথা বলা হয়েছে)। 

অতএব একটু খেয়াল করে দেখুন কুরআনিক/ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী আপনি যদি সচ্ছল হন তবে আপনাকে অবশ্যই দান করতে হবে। আবার শুধু দান করলেই হবেনা, সঠিক ও যোগ্য স্থানে দান করতে হবে। নতুবা আল্লাহর নিকট দায়ী থাকবেন। তাই আপনাকে জানতে হবে কোথায় কোথায় দান করা যায়। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াতে যাকাতের ক্ষেত্র হিসেবে যে আট ক্ষেত্র প্রদর্শন করেছেন তাই সবচেয়ে সঠিক স্থান। যথা-

১। ফকির    

২। মিসকিন 

৩। যাকাত আদায়কারী 

৪। যাদের ইসলামের প্রতি চিত্তাকর্ষণ করা প্রয়োজন

৫। দাস মুক্তির জন্য   

৬। ঋণ গ্রস্তদের জন্য  

৭। আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য 

৮। মুসাফিরের জন্য

এখন সচেতন মনে লক্ষ্য করুন, আপনার এই ক্ষুদ্র দান এদের সামাজিক কোন পরিবর্তন আনতে পেরেছে কিনা? নাকি তাদেরকে দান গ্রহণ একটা ব্যবসা ধরিয়ে দিয়েছেন? যাদেরকে দান করছেন তারা এটা পাওয়ার জন্য সত্যিকারের যোগ্য কিনা? সব মিলিয়ে যা দেখতে পাওয়া যায় তা হলো- আপনি নিয়মিত দান, সদকা, যাকাত, ফিতরা, মানতের টাকা বিক্ষিপ্ত ভাবে কোথাওনা কোথাও দিচ্ছেন কিন্তু তা আমাদের সামাজিক কোন উন্নতি আনতে পারছেনা। বছরে ৪৫০০ কোটি টাকা দান করা হয় (সূত্র- সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তর)। কিন্তু দেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

আশার কথা হলো- আপনাদের এই বিক্ষিপ্ত ক্ষুদ্র বা বৃহৎ দানকে পুঞ্জীভূত তথা ফান্ড আকারে গঠন করে তার সঠিক ব্যবহারের জন্য নিবেদিত মানব উন্নয়ন সংস্থা গঠিত হয়েছে। এই সংস্থার মাধ্যমেই আপনার ক্ষুদ্র দানটা সমাজের আর্থিক অবস্থা পরিবর্তন করবে বলে আমরা আশা করি।

আমাদের ভাবনা ও কার্যক্রম আপনার পছন্দনীয় হলে আর্থিক সাহায্য প্রদান, পরামর্শ সহ সার্বিক সাহায্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মেইল করুন অথবা কমেন্টস করতে পারেন। 

No comments:

Post a Comment